বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ অপরাহ্ন
শেখ মাহতাব হোসেন ডুমুরিয়া খুলনা।
শুক্রবার ৪সেপ্টেম্বার সকাল থেকে দিনভর সিংগা,গ্রামের ৪০টি পরিবার কে ২হাজার টাকা করে ৮০হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় এক মাস যাবত মানবেতর জীবন-যাবন কাটছে পানিবন্দি প্রায় ৬ হাজার পরিবারের। এখনো রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাড়ি আঙিনায় হাত খানেক পানি। প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি পানির নিচে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার মৎস্য ঘের। কয়েক টি কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। উঁচু জায়গা বা রাস্তাঘাটে আশ্রয় নিয়েছে অনেকেই। এসমস্ত এলাকায় অধিকাংশ মানুষের ঘরে খাবার পুরিয়ে এসেছে। এসব মানুষের পাশে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন এর নেতৃত্বে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে এসময়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ প্রাণ কোম্পানীর সিও আনিচুর রহমান ,এসডাব্লিইএসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদ বিল্লাহ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ হোসেন, প্রকৌশলী মোঃ রাসেল আহম্মেদ, ডুমুরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর আলম, ইউপি সদস্য মোল্যা আবুল কাশেম, গাজী মাসুদ রানা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, দিলীপ কুমার গাইন প্রমুখ।।
উল্লেখ্য বিল শিংগার ঘেরের অনেক মাছ, গলদা চিংড়ি ও ঘেরের আইলের সবজি সব পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করেছে। এই ক্ষতি কীভাবে উঠাব জানি না? এখন আমাদের এই দুরাবস্থা। দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারি না। কী যে করব? বুঝে উঠতে পারছি না। প্রতি বছর এভাবে বিল তলিয়ে যাচ্ছে। গত বছর আমার অনেক মাছ চলে গেছে। এ বছরেও একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকটা ঘেরের এমনই অবস্থা। সব ঘের তলিয়ে গেছে। বাকি যেটুকু আছে, ডাঙ্গার পানি বিলে ঢুকলে, সেটুকুও আর থাকবে না। বিলের পানি সরানোর কোনো জায়গা নেই। তবে একটা জায়গা আছে। খর্নিয়া সুইচগেট দিয়া পানি সরানোর কোনো সুব্যবস্থা নেই, পানি বিলের ভিতরে ঢুকছে। আমরা এখন খুব অসহায় অবস্থায় আছি।
ভারি বর্ষণে বিল শিংগা, চহেড়া, টিপনা, মিকশিমিল, মৌজার সহস্রাধিক মাছচাষির ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ। ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব মাছচাষিরা।
রানাই গ্রামের ফারুক সরদার বিল শিংগার অন্যতম বড় একজন মাছচাষি। তিনি বলেন, এক সময় এই বিল শিংগা আমাদের জন্য খুব একটা আশীর্বাদের জায়গা ছিল। এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে, বিগত দুই বছর ধরে এটা আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন বয়ে এনেছে। আমরা এখানে যারা মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল, সবাই পানিতে প্লাবিত। এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির মাছ এখন পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উন্মুক্ত বিলে মানুষ মাছ শিকার করছে আর মাছচাষিরা কেঁদে মরছে। বিল শিংগা প্লাবিত হওয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার নিজেরও তিনটা ঘের প্লাবিত হয়েছে। কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এখানে সরকারি কিছু চিংড়ি মাছের প্রকল্প আছে। সেগুলোও প্লাবিত হয়েছে। ফারুক সরদার প্রশ্ন রেখে বলেন,সরকারি প্রকল্পগুলোতে মাছ দিল,খাবার দিল কিন্তু তারা পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা করলো না।
অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এ অবস্থা হয়েছে। টিপনা মৌজার কয়েক হাজার মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। সর্বনাশ হয়েছে মাছচাষিদের।
ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ দিদার হোসেন, গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বিল শিংগার সুইস গেটের কপাট উঠিয়ে দিলে বিল শিংগার পানি সরতে না পেরে পানি ভিতরে প্রবেশ করেছে বলে জানান তিনি আরো বলেন আমার বি এ ডিসির প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এর সাথে আলাপ হয়েছে,অতি সত্বরে বিল শিংগার পানি সরতে মটর ক্রয় করে দূরুত পানি সেচ দিয়ে ফেলানো হবে। এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান রিগান মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
খুলনার ডুমুরিয়ায় টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অনেক মাছের ঘের , এ জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে বিগত দিনে যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন, তারা কখনো পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারটা মাথায় রাখেনি। কখনো তারা শিংগা বিলের দিকে তাকিয়ে দেখেনি। এখন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি আমাদের দান-খয়রাত বা জাকাত লাগবে না। আমাদের একটাই দাবি বিলের পানির নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। বিল শিংগার মাছ চাষি টিপনা গ্রামের ফারুক সরদার বলেন, ঘেরের উপর হাঁটু সমান পানি। ঘেরের পাড়ে মরিচের চারা লাগিয়ে ছিলাম। এখন উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ঘেরের মাছ সব চলে যাচ্ছে। নেট দিয়েছি। ঠেকানো যাচ্ছে না। নেটের উপর দিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে। একই এলাকার মাছচাষি রিজাউল ইসলাম বলেন, এক সময় বিল শিংগা আমাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। এখন আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এখান থেকে কোনো উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতি বছর তলিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতি বছর আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।